শ্যামনগর ব্যুরোঃ সাতক্ষীরার শ্যামনগরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিমের আয়োজনে প্রাণ প্রকৃতি এবং প্রাকৃতিক জলাশয় দখলমুক্ত করণে মানববন্ধন এবং স্মারকলীপি প্রদান করা হয়েছে। বৃহঃস্পতিবার (১৩ জুন) সকাল ১০ টায় শ্যামনগর সদর বাসস্ট্যান্ডে উক্ত কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন এবং স্মারকলীপি প্রদানে বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব ব্যাপকভাবে গ্রাস করেছে অত্র অঞ্চলে। আর এ্র মধ্যেই নদী খাল দখল বন্ধ নেই ভূমি দস্যুদের। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশের বহু নদ নদীর গতিপথ পরিবর্তন,তলদেশ ভরাট সহ বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলেও নদী ভরাটের ইতিহাস একেবারেই ভিন্ন। মানব সৃষ্ট দুর্যোগের একটি দৃষ্টান্ত ইতিহাস হয়ে থাকবে এসব নদী।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিএনআরএস এর সহযোগীতায় বক্তারা আরো বলেন, নদী শুকিয়ে গেলে সভ্যতা বাঁচেনা,একটি নদী বিলিন হয়ে যাওয়ার সাথে একটি ইতিহাসের পাতা বন্ধ হয়ে যায় এমনটাও মন্তব্য রয়েছে ইতিহাসবিদদের। শ্যামনগরের নদী আর প্রাকৃতিক জলাশয়ের বর্তমান অবস্থা ইতিহাসের সেই পাতা বন্ধের উপক্রম হতে চলেছে।
বর্ষা মৌসুমে শ্যামনগর উপজেলায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বর্ষামৌসুমে হাজার হাজার বিঘা কৃষি জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থসহ জনসাধারনের জানমালের অপূরনীয় ক্ষতি হয়।
ইতহাস আর ঐতিহ্যের পাতা দেখলে উপজেলার বিভিন্ন নদী এবং প্রাকৃতিক জলাশয়ের বহু দৃশ্যপট চোখে পড়ে। আর তা থেকে বোঝা যায় নদ নদী আর প্রাকৃতিক জলাশয় ছিল এই অঞ্চলের মানুষের জন্য আশির্বাদ। এই অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন জীবনের জন্য পাথেয় হিসেবে থাকলেও তা আজ অভিশাপে পরিনত হয়েছে।
নদী শুকিয়ে যাওয়া কেবল জলবায়ু বদল নয় বরং কৃষি, জীবন জীবিকা, স্বাস্থ্য ও প্রাণবৈচিত্র্যের অস্তিত্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। আদিকাল থেকে নদীর উপর নির্ভরশীল ছিল এ অঞ্চলের কৃষি, পরিবেশ, প্রতিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য, জীবন জীবিকা, সভ্যতা ও সংস্কৃতি। যুগ যুগ ধরে নদী আর খালের সংযোগ এলাকায় কৃষক, জেলে, কামার, কুমার, তাঁতি, কবিরাজ, মৌয়াল, বাওয়ালসহ বাঙ্গালী ও আদিবাসী গ্রামীণ জনগন এক স্থানিয় প্রতিবেশ নির্ভর জ্ঞান চর্চার মধ্য দিয়ে রক্ষা করে চলেছিল শস্য ফসলের জাত, কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্য ভান্ডার, গৃহস্থলী উপকরণসহ নানান গ্রামীণ পথ ও প্রযুক্তি। কিন্তু কালক্রমে জলবায়ু পরিবর্তন, ৬০ এর দশকের উপকূলীয় বাঁধ তৈরী, নদী দখল ও দূষণ, নদী সংযোগ খালগুলো ভরাট, অবৈধ দখল ও অপরিকল্পিত চিংড়ী চাষের কারনে নদী ও নদী নির্ভর মানুষের জীবনযাত্রা বর্তমানে ভয়াবহভাবে বিপন্ন। সুতরাং জলাবদ্ধতা নিরসন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিছুটা হলেও নদী এবং খাল বাচিয়ে রাখতে হবে।
বর্তমানে খাল দখল এবং চিরস্থায়ী বন্দবস্ত পেয়ে এলাকায় জলাবদ্ধতার কারনে কৃষকের শত শত বিঘা জমি পতিত অবস্থায় থাকলেও দেদারছে খালে নেট পাটা দিয়ে মাছ চাষ করছে দখলবাজরা।
এসময় আয়োজককারীরা ইতিহাস ঐতিহ্য আর প্রাণ বৈচিত্র্য রক্ষায় উপকূলের দখল হওয়া নদী আর খাল দখল মুক্ত হওয়া অতি জরুরী বলে উল্লেখ করেন।এসময় উপস্থিত ছিলেন শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক প্রকৌশলী শেখ আফজালুর রহমান, সদস্য সচিব আবু সাইদ,আনন্দ টিভির প্রতিনিধি ডা. তপন কুমার বিশ্বাস, সিডিওর নির্বাহী পরিচালক গাজী আল ইমরান,সিএনআরএর আরিফুর রহমান, মোস্তাক হোসেন, প্রিথা মেহজাবিন,সুন্দরবন কোয়ালিশনের ম্যানেজার তোহিদুল ইসলাম,সিডিও ইয়ুথ টিমের আহবায়ক কমিটির সদস্য হাফিজুর রহমান, রুহানি,আবু রায়হান, কাশিমাড়ি ইউনিট সভাপতি ইমরান হোসেন,আটুলিয়া ইউনিট সভাপতি শাকিল হোসেন,সিডিও ইয়ুথ টিমের সদস্য গাজী আবুজার সহ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী। মানববন্ধন শেষে সাতক্ষীরা ৪ আসনের মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য এস এম আতাউল হক দোলন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইদ উজ জামান সাইদ এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্মারকলিপি করেন স্বেচ্ছাসেবীরা।
Design & Developed BY- zahidit.com
Leave a Reply